কেঁচো চাষ করে সাবলম্বী কৃষক

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ

কৃৃষি প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

kachuchashএকটা সময় ছিল, যখন মাটি খুঁড়লেই কেঁচো বের হতো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে এখন জমির উর্বরা শক্তি যেমন কমেছে, কেঁচোও কমেছে অনেক। যার কুফল ভোগ করছেন কৃষকেরা।

মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে প্রাকৃতিক লাঙল হিসেবে কাজ করে কেঁচো। মাটির জৈব সার তৈরিতেও এর জুড়ি নেই। কেঁচোর মধ্যে গা-ঘিনঘিন ভাব যতই থাকুক না কেন, প্রাণীটি কৃষকের পরম বন্ধু। কৃষককে কেঁচো সরবরাহ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করছেন মেহেরপুরের ভূমিহীন চাষি আবদুুল করিম। একই সঙ্গে কেঁচো চাষকে তিনি একটি লাভজনক কৃষিবান্ধব ব্যবসায় হিসেবে পরিচয় করেছেন কৃষকদের কাছে।

২০০০ সালের বন্যা। মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রাম ছেড়ে ভূমিহীনদের জন্য গড়া আমঝুপি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর আশ্রয়ণে আশ্রয় নেয় করিম। সেখানে অন্যের এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। একই সঙ্গে শ্রম বিক্রি করে জীবিকাও চলত তার। ২০০৭ সাল পর্যন্ত করিম ২০ হাজার টাকা জমান। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ওই টাকা দিয়ে আরও দুই বিঘা জমি ইজারা নেবেন। কিন্তু সে বছর সার ও বীজের তীব্র সংকট দেখা দেয়। তখন মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষি কার্যালয়ের ব্লক সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম তাঁকে লালা (লাল) জাতের কেঁচো সংগ্রহ করে তা গোবরে চাষ করে জৈব সার তৈরির পরামর্শ দেন।

পরামর্শ গুলো মনে ধরে করিমের। শুরু হয় তাঁর কেঁচো খোঁজার অভিযান। একই বছরের অক্টোবরে তিনি ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর থানার শান্তিপুরের বাসিন্দা প্রদীপের বাড়ি যান। সেখানে ২০ দিন থেকে তিনি কেঁচো চাষের ওপর প্রশিক্ষণও নেন। এ সময় এলাকায় ঘুরে তিনি দেখেন, অধিকাংশ বাড়িতে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। এ সার ব্যবহারের ফলে আশাব্যঞ্জক ফলও পাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা।

প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে পাঁচ হাজার টাকায় ২০ হাজার কেঁচো কিনে দেশে ফেরেন । কেঁচোর প্রজনন ও জৈব সার তৈরির জন্য তিনি ১২ হাজার টাকায় একটি গাভি কেনেন। শুরু হয় তাঁর গোবরে কেঁচো চাষ করে সার তৈরি। এসব কেঁচো দেখতে লাল। গোবর খেয়ে এগুলো যে মল ছাড়ে, এটিই জৈব সার। দেখতে চায়ের দানার মতো লালচে কালো। প্রথমে ইজারা নেওয়া জমিতে এ সার ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফল পান করিম। তাঁর জমিতে বাড়তি ফলন দেখে আশপাশের চাষিরা এ ব্যাপারে উৎসাহী হন। তাঁরা এসে কেঁচো ও সারের জন্য ধরনা দেন করিমের কাছে। এতে তাঁর আয়ের পথও বের হয়।

নিজের গরু থাকায় কেঁচো চাষ ও সার উত্পাদনে করিমের কোনো ব্যয় নেই। শীতকাল ছাড়া সারা বছরই কেঁচোর বাচ্চা হয়। আর এগুলোর বংশবিস্তারও খুব দ্রুত ঘটে। এ কারণে মাত্র দুই বছরে করিমের ২০ হাজার কেঁচো পাঁচ লাখে পৌঁছে।

প্রতিটি কেঁচো তিন টাকা দরে তাঁর পাঁচ লাখ কেঁচোর দাম এখন ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ কেঁচো তিনি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। সার বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় এক লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে তিনি পাঁচটি গরু কিনেছেন এবং চাষাবাদের জন্য ইজারা নিয়েছেন ২০ বিঘা জমি। স্ত্রী ও সন্তানেরা এসব কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন বলেন, আদর্শ মাটিতে পাঁচ ভাগ জৈব উপাদান থাকে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মেহেরপুরের মাটিতে এখন জৈব উপাদান আছে মাত্র এক ভাগ। গোবরে চাষ করা করিমের কেঁচো-সারে জৈব উপাদান আছে ৩০ ভাগ। আবার এই সারে মাটির আরও ১০ ধরনের উপাদান থাকায় ফসল বাড়ার সঙ্গে এর পুষ্টিমানও বাড়ছে। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তিও বাড়ছে বহু গুণ।

আবর্জনা পচিয়ে কেঁচো-সার তৈরি করা হলেও করিম শুধুমাত্র গোবরে কেঁচো চাষ করে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার তৈরি করছেন, যা হতে পারে কৃষকদের অনুকরণীয় উদাহরণের সাথে সাথে অায়ের উৎস।

প্রতিক্ষণ/এডি/স্বপন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G